না, আমার, আমাদের, মানে অফিসিয়ালি 'আসাম'এর বাঙালিদের, ব্যাঙ্গালোরে আপাতত বিপদ নেই। আমরা 'মিড্ল্ ক্লাস', আমরা টিঁকে যাবো। আমরা নিরাপদে বসে বড় বড় জাতীয় সংহতির বুলিও দেবো। ফ্ল্যাট্ করবো বেঙ্গালোর নইলে কলকাতায়। ...কিন্তু যারা তা নয়, যারা এই দেশের ৯৯ ভাগ, যারা অশিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত তারা বাঁচবে কীভাবে? আজ না হোক কাল টিঁকে থাকার জন্য হয় তাদের বলতে হবে 'আম্গো বাসা কইলকাত্তা' ... আর নাহলে আসামে থাকলে, মুখে কিংবা কায়দায় 'আম্গো ভাহা অহইম্মা' বলে, ভূপেন হাজারিকাকে রবীন্দ্রনাথের চেয়েও বড় বলে সালাম ঠুকে 'অহইম্মা' হয়ে। ... ...
বরাক উপত্যকার বুদ্ধিজীবীরা বিশেষ করে বামপন্থী বুদ্ধিজীবীরা কিছুদিন আগে পর্যন্তও পশ্চিমবাংলাকে দেখিয়ে বড়াই করে বলতেন ‘বাঙালির মধ্যে জাতপাত নেই’। কীভাবে তাঁরা বুঝলেন যে সেখানে জাতপাতের বিভাজন নেই – কারণ বিহারে ভূমিহার-রাজপুত-ঠাকুর-দলিত-যাদব-কুর্মী ইত্যাদির মধ্যে সহিংস সংঘাত লেগেই থাকে, কিন্তু পশ্চিমবাংলায় অপার শান্তি। সেখানে যেমন রণবীর সেনা রয়েছে – তেমনি রয়েছে দলিত সেনা – পশ্চিমবাংলায় তো তেমন নেই। তাঁরা সম্পত্তি-সম্পর্ক বিচার করার দিকে না গিয়ে বহিরঙ্গের শান্তি-অশান্তির রূপ দিয়ে জাতপাতের বিচার করলেন। বিহারে উচ্চবর্ণের জমির মালিক সরাসরি জমির সাথে যুক্ত থেকে সস্তায় শ্রম শোষণকে সুনিশ্চিত করতে শারীরিক নিগ্রহ চালাত। দলিতরা তার প্রতিরোধ করলে কিংবা যে কোন শ্রেণি সংগ্রাম সেখানে শুরু থেকেই হিংসাত্মক রূপ নেয়। দীর্ঘ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে এই সম্পত্তি সম্পর্কের খানিকটা পরিবর্তন সাধিত হয়েছে – কিন্তু তা এখানে আলোচ্য বিষয় নয়। পশ্চিমবাংলায় বর্ণহিন্দু আধিপত্য যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মধ্যেই বিরাজ করছিল তা এখন সবার কাছেই পরিষ্কার। সাচার প্রতিবেদন প্রকাশ পাওয়ার পর “পশ্চিমবাংলায় সাম্প্রদায়িকতা নেই” এই দাবিও যে ঠুনকো তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া গরীব মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার হিংসাত্মক রূপ পরিগ্রহ করার প্রয়োজন পড়ে না, কারণ বর্ণহিন্দু আধিপত্য যেখানে শান্তির বাতাবরণেই সবচাইতে সুরক্ষিত থাকে সেখানে অশান্তি ডেকে আনা আধিপত্যের পায়ে কুড়োল মারার সামিল। বরাক উপত্যকার ক্ষেত্রেও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জনসংখ্যাগত ভারসাম্যের চিত্রটি বাদ দিলে শান্তির এই একই যুক্তি ক্রিয়াশীল থাকে। ... ...
পুজোর দিনগুলিতে সন্ধ্যে নামার আগেই শিউলি চলে আসে শিঙ্গিমারি নদীর কাছে। সাবেক বাত্রিগাছ ছিটমহলের কোল ঘেঁসে শিঙ্গিমারি বয়ে চলেছে ভূগোলের মানচিত্র ভেঙে টুকরো হয়ে যাওয়া আর এক বঙ্গদেশের হাতছানির অমোঘ ইশারায়। শিঙ্গিমারির কাছে এলেই শিউলি যেন তাঁর মাকে ফিরে পায়। পূজো আসলেই শিউলির গোলাপি মনটা কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে ওঠে। দুর্গার মুখ দেখলেই কেবলই মায়ের মুখ মনে পড়ে। ফ্যালফ্যাল করে সে মণ্ডপের দুগগা মার মুখপানে চেয়ে থাকে। শিউলির বিলক্ষণ মনে আছে, এমনই এক শারদ সন্ধ্যা ঝুপ করে নেমে আসার সন্ধিক্ষণে শিঙ্গিমারির কূল ধরে মা চলেছিল বিসর্জনের পথে। ... ...
বোড়ো ও মুসলিমরা ঐতিহাসিক ভাবে অসমিয়া সমাজের প্রান্তিক মানুষ। অথচ সমাজ ও মিডিয়ার একাংশ বাংলাদেশ থেকে 'অবৈধ' অনুপ্রবেশ কে একপার্শ্বিক ভাবে দায়ী করছেন, যেন এই একটি কারণ সমস্ত হিংসার মূলে। আমরা মনে করি, এই ধরনের সংঘর্ষের এরকম সরল ব্যখ্যা হয় না। জাতিবিদ্বেষের ফাঁদ থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখা এখন আমাদের সবার জন্য জরুরী। কিছু কায়েমী স্বার্থ সন্ধানী দল , এই হিংসা ও বিপর্যয়ের সময়টিকে বেছে নিয়েছেন, তাদের বহু পুরনো লক্ষ্য চরিতার্থ করতে। বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী বিতাড়নের দাবীটি সামনে আনাই তাদের উদ্দেশ্য। হিংসাত্মক কার্যকলাপ আর জীবনহানিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক অভিসন্ধি পূরণের এই চক্রান্তের আমরা কঠোর ভাষায় নিন্দা করি। আমাদের দাবীঃ ১) হিংসা, অগ্নি-সংযোগ ও হত্যা অবিলম্বে বন্ধ হোক। ২) আসাম সরকার, বিটিসি কর্তৃপক্ষ ও কেন্দ্রীয় সরকার জীবন ও জীবিকার এই ক্ষতির সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিক ও উৎখাত হওয়া মানুষদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুক। আমরা আবেদন করি ঃ ১) এই ধ্বংসলীলা রুখতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সক্রিয় ভূমিকা পালন করুক। ২) শান্তি ও স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় সংগঠনগুলি একটি মিলিত সমাধানের ডাক দিক। ৩) সাম্প্রদায়িক সম্পর্কের ক্রমাবনতি রুখতে , স্থানীয় ও জাতীয় মিডিয়া, দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার পরিচয় দিক। ... ...
বষয়টিকে একটু বিশদ করার প্রয়োজন মনে করি। যে কোনও বাঙালিরই মানসভুবন কলকাতা আর দেশভাগে বাস্তুচ্যুত বাঙালির শিকড়ভুবন পূর্ববঙ্গ। বাস্তুচ্যুত যে কোনও বাঙালি কবিরই নান্দনিক জগৎ কলকাতায়, সেখান থেকে ইশারা আসে, খবর আসে। সেখানকার আলো হাওয়ায় কেলাসিত হয়ে বহির্বিশ্বও তার কাছে এসে ধরা দেয়। আবার তার প্রাণের শিকড় তো, অন্তত গত শতাব্দী পর্যন্ত, চারিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের কোনও চোখে না দেখা-নাম শোনা কিংবা চোখের দেখা-প্রাণের-কথায়-ভরা গ্রামে। সেখান থেকে কি আসত? আসত স্মৃতি আর রূপকথা। কিন্তু তার বাস্তবের পৃথিবী? দেশভাগের পর বাস্তুচ্যুত বাঙালির বাসভুমি তো ছড়িয়ে আছে আবিশ্ব - নিউ ইয়র্কের পানশালা থেকে আসাম কিংবা মিজোরামের অনাবাদী জমির পাশের ঘাসবৃক্ষ পর্যন্ত। এখন, এই বাস্তবের পৃথিবীর শিশিরবিন্দুগুলিকে ভালো না বেসে, তার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে কবি যদি শুধু ঘুরে বেড়ান এক অতৃপ্ত মানসলোকে কিংবা স্মৃতিপৃথিবীতে - তাঁর এই পর্যটন তো, পুরাণের ভাষায় বললে, গণেশের সেই মাতৃপ্রদক্ষিণ, যা আসলে কার্তিকের প্রকৃত ভ্রমণটিকে দাবিয়ে রাখার জন্য বানানো এক নিপুণ কথার ফাঁদ। তো একজন কবির তো আসল সত্যটা জানা চাই। কথার ফাঁদ কতদিন আটকে রাখবে তাঁর কবিত্বকে? আর এই কথার ফাঁদ থেকে মুক্তি পেয়েছে আসামের বাংলা কবিতা তার আশ্চর্য ভূগোল-সচেতনতায়। মূলত দুই দুটি বিশ্বযুদ্ধের কারনে বিগত শতাব্দীটি ছিল কাঁটাতারের আর উদ্বাস্তু প্রব্রজনের। তার ভূগোল-চেতনার মাধ্যমে আসামের বাংলা কবিতা সব মানস-কাঁটাতারকে অগ্রাহ্য করার শক্তি পেয়েছে। ... ...
বরাক উপত্যকা ছেড়ে যাওয়া দুই কবি-প্রতিভা স্বর্ণালী বিশ্বাস ভট্টাচার্য ও সপ্তর্ষি বিশ্বাস যেমন অবচেতনেই তাঁদের ভূগোলকে মনের ভেতর গেঁথে নিয়ে চলে যান, তেমনই এই আসাম-দেশেই তো উত্তরবঙ্গের মানচিত্র-প্রান্তর-তিস্তাতোর্ষা মাথায় করে নিয়ে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বসতি গাড়েন দুই কবি- বিকাশ সরকার আর অভিজিৎ চক্রবর্তী। তারপর কি হয় দেখুন। বিকাশ এই ভূগোলে বসেই তাঁর শৈশবের গ্রাম গয়েরকাটার দিকে এক অনন্ত মানসভ্রমণে মেতে ওঠেন। মানচিত্রের অবরোধ ভেঙে পড়ে। এক প্রান্তিকতা আরেক প্রান্তিকতাকে কাছে টেনে নেয়। কারণ কে না জানে, আজকের এই রাজনৈতিক মানচিত্রে কলকাতার কাছে উত্তরবঙ্গ এখনও এক প্রান্তই। ... ...
মিঞাদের আরো নাম আছে। পুরাতন অসমিয়াদের কাছে তারা 'ময়মনসিংগিয়া'। সম্বোধনটি তাচ্ছিল্যমিশ্রিত। তবে এর খানিক ইতিহাসভিত্তি আছে। বৃটিশদের ভূমিরাজস্বের খাঁই ছিল ভরপেট। আসামদেশ দখল করার পর সায়েবদের খেয়াল হল এখানে জমির অভাব নেই। অথচ জনসংখ্যা অপ্রতুল। রাজস্ব বাড়ানোর জন্য জমি চাষে লাগানো দরকার। ব্রহ্মপুত্রের চর, পলিজমি পাট চাষের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু চাষ করবেটা কে? বাংলার জনঘনত্ব সেই সময় আসামের কয়েকগুণ। অতএব প্রশাসন পূর্ববঙ্গ থেকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় চাষিদের আনার উদ্যোগ নিল। এদের প্রায় সবাই মুসলমান ছিলেন, এবং বেশিরভাগ ময়মনসিংহের। কালে পূর্ববঙ্গের মুসলমান মাইগ্রান্ট চাষি মানেই ময়মনসিংগিয়া নাম হল। বর্তমানে তাদের 'ন-অসমিয়া' নাম দিয়ে অসমিয়া সমাজে একাত্ম করার চেষ্টা চলছে। সরকারি প্রচেষ্টা আর কী। মধ্যবিত্ত মানসের অবস্থা বাসের মত। পাট চাষ নিয়ে এই লেখা,মাঝখানে শিবের গীত এসে গেছে। পরশু, ১০ অক্টোবর বেসিমারি গঞ্জে পুলিশের গুলিতে ৪ জন পাট চাষি মারা গেছেন, অনেকে আহত। দাবি ছিল পাটের জন্য ন্যায্য দামের, পাটের স্তুপ বানিয়ে ৫২ নং সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশের মাথায় ঢিল পড়লে পুলিশ কয়েন, মানে গুলি, ছোঁড়ে। ... ...
এই মঞ্জু ভাইয়ের কাজ ছাড়া পূজা মণ্ডপ যেন তৈরিই হয় না। সবাই চায় মঞ্জু ভাই ওদের মণ্ডপে কাজ করুক। আর মঞ্জু ভাইয়ও হয়েছে একটা মানুষ, আটটা দশটা মণ্ডপের কাজ নিয়ে পূজার কয়টা দিন পাগলের মত ঘুরে। আমি একবার জিজ্ঞাস করেছিলাম, খুব কামাচ্ছেন? উনি হাসি দিয়ে বললেন, আরে নাহ, টাকার জন্য না, ধর্মীয় কাজে টাকার হিসাব করলে চলে!! পরে খোঁজ নিয়ে দেখলাম, আসলেই তাই। যে মঞ্জু ভাই কে বিয়ের প্রোগ্রামের জন্য দেন দরবার করে পেতে হয় আমাদের সবার, সেই মঞ্জু ভাই অনায়াসে সকলের সাথেই আছে, টাকা পয়সাও যে যত যখন পারছে দিচ্ছে। মঞ্জু ভাইদের জন্যই এখনো দেশ নিয়ে আশা করতে পারি। খাদ থেকে হয়ত বেঁচেও যেতে পারি আমরা। ... ...
কিন্তু শাহবাগে যে স্বতঃস্ফুর্ত গণজাগরণ হয়েছে তা তো কোনো দলের নয়, কোনো একটি পত্রিকার নয়; গোটা দেশের। সারা বিশ্বের সকল বাঙালির ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে শাহবাগের ডাক। মতি ভাই ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর গণআন্দোলনের মাঠের সৈনিক। কিন্তু ২০১৩-এর গণজাগরণে তাকে এক সেকেন্ডের জন্যও দেখি নি। কেন? এমন তো নয় মতি ভাইয়ের অনেক বয়স হয়ে গেছে, কোথাও যান না। বরং পত্রিকার স্বার্থে অনেক অগুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানেও তাকে যেতে দেখি। মতি ভাইদের গণঅভ্যুত্থান অনেক মহৎ ছিল। গণঅভ্যুত্থানের বছর জন্ম বলে আমি অনেক গর্ব করি। কিন্তু তাই বলে আমাদের নতুন প্রজন্মের গণজাগরণের মহত্বও তো কম নয়, অন্তত মতি ভাইয়ের না যাওয়ার মতো অত খারাপ না। ... ...
আমি জানি না রেল কিম্বা সড়ক যে পথেই হোক শিলচর যাবার মতো সুন্দর পথ অসমে আর দ্বিতীয়টি আছে কিনা। আমি জানি না, অসমের আর কোথাও দয়াং কিম্বা জাটিঙ্গার মতো সবুজ, স্বচ্ছ নদী রয়েছে কিনা। আমি জানি না ভুবন পাহাড়ের মতো বিশাল রোমাঞ্চকর গুহা অসমে আর রয়েছে কিনা। বাকি সব পাহাড়, অরণ্য, ইতিহাসে ধন্য রাজনীতি, সংস্কৃতি কিম্বা ধর্মের কেন্দ্রগুলোর কথা না হয় উল্লেখ করলামই না। সে গুলো নিয়ে অন্য কখনো, অন্য কোথাও লিখব না হয়। আপাতত দাঁড়ানো যাক। ... ...
২০০৫এ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পুনর্বিন্যাস (Refreshers Course) পাঠক্রমে গিয়ে শেষ দিনে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখোমুখি হবার সৌভাগ্য হয়েছিল। সবাই জানেন, তিনি আজকাল মাতৃভাষা নিয়ে বেশ আবেগিক। ক্যালকাটার "কলকাতা' হবার পেছনে তাঁকে বেশ ঘাম ব্যয় করতে হয়েছে। বরাকের ১৯কে সে বাংলাতে জনপ্রিয়তার পেছনেও তাঁর এক বড় ভুমিকা আছে। বক্তৃতার এক জায়গাতে, তিনি আক্ষেপ করে বললেন, "গিয়ে দেখুন না এখন দার্জিলিঙে! ওখানে বাঙালি আর আগের মতো পাবনে না।' পরের বছর সত্যি সত্যি আমি সপরিবারে দার্জিলিঙ-গ্যাংটকে ঘুরতে গেছিলাম। গিয়ে দেখি, ওখানকার প্রায় সমস্ত বড় বড় হোটেল, রেঁস্তোরার, ট্র্যাভেল এজেন্সির মালিক এবং কর্মচারি, রেলের কর্মচারি সবাই বাঙালি। আমাদের গাড়িতে করে ঘুরিয়ে আনবার জন্যে যাদের ডাক পরেছিল তাদের মধ্যে কেউ শুধু ছিল ভুটিয়া কিম্বা নেপালি! সুনীলের কথা শুনে আমার মনে হছিল, আমি ব্রহ্মপত্র উপত্যকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বসে আছি। সেখানে বক্তব্য রাখছেন কোনো অসমিয়া বুদ্ধিজীবি। বলছেন, "গিয়ে দেখুন না বরাক উপত্যকাতে! ওখানে অসমিয়া আর আগের মতো পাবেন না। ওখানকার বেতারে বাজে কেবল বাংলাদেশের গান!' পাঠকের মনে পড়বে বিখ্যাত অসমিয়া বুদ্ধিজীবি ইসমাইল হোসেন চাকরি সূত্রে শিলচর থেকে গুয়াহাটি গিয়েই "সাদিনে' বেশ ক'টি সংখ্যাতে সেরকমই অনেক কথা লিখে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন। বহু অসমিয়াও তখন তাঁর বিরুদ্ধে তখন কলম ধরেছিলেন। সুনীল ইংরেজির পক্ষেও বেশ কিছু সওয়াল করেছিলেন। আমি শুধু তখন প্রশ্ন করেছিলাম, ইংরেজির এই আধিপত্য অক্ষত রেখে কী বাংলার প্রচার প্রসার সম্ভব বলে তিনি মনে করেন? তিনি কী উত্তর দিতে পারেন, "দেশ' পত্রিকার পাঠকেরা তা ভালই জানেন। ... ...